শুক্রবার, ৫ জুন, ২০১৫

ইসলামী আন্দোলন করা কি জরুরী ? না করলে কি গুনাহ হবে ?

ইসলামী আন্দোলন করা কি জরুরী ? না করলে কি গুনাহ হবে ।
ইসলাম এবং আন্দোলন না বুঝলে ইসলামী আন্দোলনও বুঝা যাবে না ।
ইসলামঃ আল্লাহ প্রদত্ত রাসুল(সা) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী চলার পথ ইসলাম , আর যে ব্যাক্তি ইসলাম মেনে চলে তাকে বলা হয় মুসলিম । মুসলিম শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণ কারী । অর্থাৎ যে ব্যাক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে, মনে প্রানে মেনে নেয় যে, এই জমিন আল্লাহর , এই দুনিয়া আল্লাহর , আমিও আল্লাহর একটি সৃষ্টি এবং একদিন আমাকে ফিরে যেতে হবে তার কাছে, তাকেই মুসলিম বলা হয় ।
আল্লাহ বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَঅর্থাৎঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
মানে ইমানদার হলেই কেউ মুসলিম হয়ে যায় না , আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইমানদারদেরকে বলছেন মুসলিম হতে ।

আন্দোলনঃ
যেকোন দাবী / মতবাদ/ আদর্শ প্রতিষ্ঠা / অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সগ্রাম করাকে আন্দোলন বলা হয় ।
ইসলামী আন্দোলন মানে হচ্ছে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ [النحل : 125]
ডাক , তোমার রবের পথের দিকে হিকমত ও উত্তম নসীহতের সাথে। (আন নাহল:১২৫)
কোরআনে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا [الأحزاب : 45 ، 46]
হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে এবং খোদার নির্দেশে তাঁর প্রতি আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [التوبة : 111]
সন্দেহ নেই আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জান ও মাল বেহেশতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন, এখন তাদের একমাত্র কাজ হলো আল্লাহর পথে লড়াই করা, সংগ্রাম করা। পরিণামে জীবন দেয়া বা জীবন নেয়া।(সূরা আত তাওবা ১১১)
এর থেকে প্রমাণিত যে ইসলামী আন্দোলন করা শুধু জরুরীই নয় বরং তা ফরজ ।আল্লাহ সরাসরি পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, অবশ্যই করতে হবে ।
আর ফরজ তরক করলে / না মানলে / ইসলামী আন্দোলন ন করলে গুনাহ হওয়া স্বাভাবিক ।
ইসলামী আন্দোলন করতে গেলে যেই বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দিতে হয়ঃ
১. মানুষ একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে; জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলবে। আল্লাহর আইনের ভিত্তিতেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক পরিচালিত হবে।
২. মানুষ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ নেতা রূপে মেনে চলার সুযোগ পাবে।
৩. সৎ ও চরিত্রবান লোকেরা শাসন কর্তৃত্বের পরিচালক হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন স্থান থাকবে না।
৪. আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা : কেউ কারো প্রতি কোন ধরনের অন্যায় আচরণ করবে না।
৫. রাষ্ট্র পরিচালিত হবে পরামর্শভিত্তিক এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত হবে। ক্ষমতাসীনরা স্বৈরাচারী বা স্বেচ্ছাচারী হবেন না। তারা মানুষের কল্যাণে সদাসচেষ্ট থাকবেন।
৬. সমাজ থেকে অপরাধ ও দরিদ্রতা দূর করা হবে উক্ত সমাজের অন্যতম লক্ষ্য।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে শান্তি ও কল্যাণকর সুন্দর একটি সমাজ উপহার দেয়া। তবে কোন দেশের অধিকাংশ মানুষ উক্ত আদর্শের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন না করলে জোরপূর্বক ইসলামী আদর্শ চাপিয়ে দেয়া আল্লাহর বিধান নয়। অনেক নবী ও রাসূল আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন সত্য কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সেই দাওয়াত কবুল না করায় আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে পারেননি। এক্ষেত্রে হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রায় সাড়ে নয়শত বছর আল্লাহর পথে মানুষদেরকে আহবান জানানোর পর মাত্র চল্লিশ কিংবা মতান্তরে ৮০ জন মানুষ তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন।
আমার মনে হয় বর্তমানে পৃথিবীর যেসকল দেশে ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রম চলছে তাদের আসল বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট নয়। তাই তারা সহজেই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলে মনে করা হয় উক্ত সমাজের মূল কাজ হচ্ছে চোরের হাত কাটা। অথচ ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূল টার্গেট চোরের হাত কাটা নয়। মূল টার্গেট হচ্ছে দরিদ্রতা বিমোচন করা এবং অপরাধমুক্ত সমাজ উপহার দেয়া। দরিদ্রতা বিমোচন করার পর কেউ অভাবের পরিবর্তে স্বভাবের কারণে চুরি করলেই ইসলামী দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হবে। এই কারণেই হজরত উমর ফারুক (রা) এর সময়ে একজন ব্যক্তি অভাবের কারণে চুরি করলে হজরত উমর তার হাত কাটার নির্দেশের পরিবর্তে নিজেকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘ফোরাতের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা গেলে আমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
আসুন আমরা যারা নামায পড়ি , আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলার চেষ্টা করি , আজ থেকে / এখন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হই । আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

বুধবার, ৩ জুন, ২০১৫

ক্যাম্রা ম্যান, নায়ক , গাড়ির চালক, দর্শক,মিডিয়া, সব রেডি, এবার হবে মূল পর্ব,

পরিচালক হাছিনা... একশনঃ সুন্দর করে নায়ক একটি মালবাহি গাড়িতে আগুন দিতে যাচ্ছেন,
ভিডিও ম্যানঃ আরেক টু আসতে দেন, তারপর চারিদিক হতে ক্লিক, এক সাথে শত পিকচার।

মিডিয়া ম্যানঃ এই তো দেখুন আজ মালবাহি গাড়িতে জামায়াত শিবির আগুন দিয়ে তাণ্ডব করেছে, দেশের হাজার কোটি টাকা লস ...... ব্লা ব্লা ব্লা ... ।

চালকঃ দাড়িয়ে দেখতেছে কেমনে গাড়িতে আগুন দেয়া হয় ।যাতে আগামীতে নিজেই নায়ক (ছাত্রলীগ) হতে পারে ।

শুশীলঃ দেখছেন দেশ টাকে কি করতেছে ? ফাঁসি ছাড়া কথা নাই !

ব্যবসায়িঃ আমরা কেমনে ব্যবসা করব, আপনারা কিছু একটা করেন !

প্রশাসন , ওরা বোমাটা আমাদের উপর মেরেছিল , আমরা সরে যেতেই তা গাড়িতে গিয়ে পড়ে , আমরা সন্দেহজনক ৫ জন জামায়াত শিবিরকে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছি ! তখন তারা গুমাচ্ছিলো ,  তালিকায় আরও জামায়াত শিবিরের নাম আছে ।

দর্শকঃ আচ্ছা সরকার আমাদেরকে এতো বেকুব মনে করে কেন ? ওদের কি ধারনা আমরা কিচ্ছু বুঝি না । আমাদেরকে দেখানোর জন্য হোক / জামায়াতকে ফাঁসানোর জন্যই হোক না কেন , এতো গুলো মানুষকে জীবন্ত ফুঁড়ে মারার কি দরকার ?
এমনিতেই সরকার যা করছে , তাতে কি কেউ বাঁধা দিচ্ছে ?কেউ কি প্রতিবাদ করছে ?
 তবে কেন এই সব নাটক করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে ? সাধারণ পাবলিকের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলে না জানি কবে আবার মেজর ডালিমের জন্ম হয়ে যায় ?
শুধু ক্ষমতার জন্য মানুষ হত্যা ?

 আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মিড়িয়ার সহযোগিতায় , পুলিশের পাহারায় , মোটর সাইকেল দাঁড় করিয়ে সাংবাধিক আগুনের অপেক্ষা করছে অতচ ঐ সাংবাধিকই মিথ্যা প্রচার করছে।  গাড়ীতে পেট্রোল বোমা কারা মারছে তা জেনেও দেশের মানুষকে ওরা ভুল তথ্য দিচ্ছে ।

এই সকল দালাল মিডিয়াগুলোর বিচার কি বাংলার মাটিতে হবে না ? 

শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

আসসালামু আলাইকুম।

শবে বরাত কি এবং কেন বিদাআতঃ 

‘শব’ ফারসি শব্দ। অর্থ রাত বা রজনী। বরাত শব্দটিও মূলে ফারসি। অর্থ ভাগ্য। দু’শব্দের একত্রে অর্থ হবে, ভাগ্য-রজনী। বরাত শব্দটি আরবি ভেবে অনেকেই ভুল করে থাকেন। কারণ ‘বরাত’ বলতে আরবি ভাষায় কোন শব্দ নেই।
যদি বরাত শব্দটি আরবি বারা’আত শব্দের অপভ্রংশ ধরা হয় তবে তার অর্থ হবে— সম্পর্কচ্ছেদ বা বিমুক্তিকরণ। কিন্তু কয়েকটি কারণে এ অর্থটি এখানে অগ্রাহ্য, মেনে নেয়া যায় না- যেমন
ইরশাদ হয়েছে : بَرَاءَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (التوبة: ১) অর্থ : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা। (সূরা তাওবা, ১)

আগের শব্দটি ফারসি হওয়ায় ‘বরাত’ শব্দটিও ফারসি হবে, এটাই স্বাভাবিক ।

এ রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন দলীল নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ রাত্রিতে কোন সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নি। অনুরূপভাবে তার কোন সাহাবী থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি।

মুলত সহীহ হাদীসে সুস্পষ্ট এসেছে যে, “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮]

এ রাত্রি কি ভাগ্য রজনী?
না, এ রাত্রি ভাগ্য রজনী নয়, মূলতঃ এ রাত্রিকে ভাগ্য রজনী বলার পেছনে কাজ করছে সূরা আদ-দুখানের ৩ ও ৪ আয়াত দু’টির ভূল ব্যাখ্যা।
তা হলোঃ
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ* فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ – سورة الدخان:3ـ4
আয়াতদ্বয়ের অর্থ হলোঃ “অবশ্যই আমরা তা (কোরআন) এক মুবারক রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, অবশ্যই আমরা সতর্ককারী, এ রাত্রিতে যাবতীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়”।
আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলোচ্য আয়াতে ‘মুবারক রাত্রি’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর বুঝানো হয়েছে, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ – سورةالقدر:1
আমরা এ কোরআনকে ক্বাদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা আল-কাদরঃ১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ- سورة البقرة:185
রমযান এমন একটি মাস যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আলবাকারাহঃ১৮৫)।
অর্থাৎ স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে , কোরআনে যেই রাতের কথা ব্লা হয়েছে , তা হচ্ছে কদর রাত । যা রামাজান মাসে শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে রয়েছে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা‘বান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন। (এর জন্য দেখুনঃ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭, সুনানে তিরমিঝি, হাদীস নং ৬৫৭)।

সে হিসাবে যদি কেউ শা‘বান মাসে রোযা রাখেন তবে তা হবে সুন্নাত। শাবান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোন দিন রোযা রাখা জায়েয বা সওয়াবের কাজ।

তবে রোজা রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু শা‘বান মাসে রোজা রেখেছিলেন তাকে অনুসরন করে রোযা রাখা হচ্ছে। নিয়ত সহীহ হওয়া জ্রুরী ।

অথবা যদি কারও আইয়ামে বিদের নফল রোযা তথা মাসের ১৩,১৪,১৫ এ তিনদিন রোযা রাখার নিয়ম থাকে তিনিও রোযা রাখতে পারেন।

কিন্তু শুধুমাত্র শা‘বানের পনের তারিখ রোযা রাখা বিদ‘আত হবে। কারণ শরীয়তে এ রোযার কোন ভিত্তি নেই।

ইবাদত করার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো আকিদা রক্ষা করা , মানে যার ইবাদত করবেন তার উপর বিশ্বাস রাখা । আমাদের দেশে অনেকেই বলে থাকেন আমাদের বাপ-দাদারা এই সব পালন করে এসেছেন তাই আমরাও করি ।

এরমানে আল্লাহ কি চাইছেন সেটা আপনাদের কাছে বড় নাকি বাপ-দাদাদের দেখানো পথ বড় ? যেই যুক্তি আবুজেহেলও দেখিয়েছিলেন । আল্লাহর রাসুল(সা) যদি পালন করতেন তবে আমরাও করতাম ।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসরন করে চলার তৌফিক দিন। আমীন।


মনে হচ্ছে পাঞ্জাবী এবং মাদ্রাসাই পুলিশের শুত্রু ।

ছোট্ট এই বাবুটি কি বুঝে আওয়ামী লীগ , বিএনপি , জামায়াত সম্পর্কে ? হয়তো তার বাবা- মা নাই এতিম অথবা তার বাবা- মা শখ করে বাবুটিকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন দেশের একজন আলেম বানানোর জন্য অথবা একজন হাফেজ ।

কিন্তু পুলিশ কি কারনে এই বাবুটির দিকে হায়েনার মতো তেড়ে আসছে ? শিশুরা নিষ্পাপ । তাদের দোয়া আল্লাহর কাছে অবশ্যই কবুল হয়ে যাবে ।

হুঁশিয়ার হয়ে যান , আল্লাহর আজাব আসার আগেই ।
আমরা যারা আজ এসএসসি পাশ করেছি ।

চাই শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ , সন্ত্রাস মুক্ত ক্যাম্পাস
ফিরে যাতে চাই না , হয়ে লাশ ।

আমিও ভাল রেজাল্ট নিয়ে পাশ করেছি , আমারও আশা আছে ভাল একটা কলেজে ভর্তি হওয়ার । ভালভাবে পড়াশুনা করে এই দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখার ।
কিন্তু আমরা কি আসলেই সেই সুষ্ঠ পরিবেশ পাচ্ছি ? আমরা কি নিজেকে গড়তে পারবো সঠিক ভাবে ? এই নিশ্চয়তা আমাদেরকে কি কেউ দিতে পারবেন ?

হয়তো ভাবছেন আমরা ভয় পাচ্ছি কেন ?
হ্যাঁ আমরা ভয় পাচ্ছি ।
 ভয় পাচ্ছি পত্রিকার শিরোনাম দেখে , ভয় পাচ্ছি টিভি মিডিয়ার শিরোনাম দেখে , আমরা ভয় পাচ্ছি এই ভেবে যে , ওরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির গায়ে , কলেজ অধ্যক্ষের গায়ে হাত তুলতে পারে তখন আমরা তো এক একজন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী । আমাদের কি হবে ?
আমরা আতঙ্কিত , আমরা ভাবতে পারছিনা যে, আমরা কি পড়ালেখা শেষ করতে পারবো নাকি আমাদের জীবনের সমাপ্তি ক্যাম্পাসেই হয়ে যাবে ?

আমরা কি ফিরে যেতে পারবো মায়ের কোলে , না হয়ে লাশ ?

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

কাদের মোল্লা, কসাই কাদের ও কিছু প্রশ্ন

কাদের মোল্লা, কসাই কাদের ও কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বহুল আলোচিত বিষয় কাদের মোল্লার ফাঁসি। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো সংবেদনশীল একটি বিষয় এর সাথে জড়িত থাকায় আলোচনার ব্যপ্তি ছিল বিচার প্রক্রিয়া, রায়, প্রতিক্রিয়া হিসেবে শাহবাগের গণজাগরণ, আইন সংশোধন, রায় পরিবর্তন, এবং শেষপর্যন্ত ফাঁসি নিয়ে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফাঁসির মধ্য দিয়েই ঘটনার যবনিকাপাত ঘটেনি। উঠে এসেছে নতুন কিছু প্রশ্ন।

কাদের মোল্লার বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মূলতঃ দুটি বিষয়ে -

বিচার প্রক্রিয়ায় আপাতঃ অনিয়ম, অন্যায্যতা, বা আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় ব্যর্থতা
কাদের মোল্লার পরিচয় সংক্রান্ত জটিলতা

প্রথম ইস্যুটি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে বিস্তর। এর মধ্যে সাংবাদিক David Bergman এর ব্লগhttp://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/ উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে প্রমাণে জটিলতার কারণে দ্বিতীয় ইস্যুটিতে আলোচনা কম হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অভিযুক্তের সংশ্লিষ্ট অপরাধে নিজেকে নির্দোষ দাবি করা যা প্রতীয়মান হয় জেল থেকে সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিকে লেখা চিরকুট বা ফাঁসির পূর্বে স্ত্রীকে লেখা শেষ চিঠি থেকে। এ থেকে প্রশ্ন জাগে অভিযুক্ত কাদের মোল্লা এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কুখ্যাত মিরপুরের কসাই কাদের একই ব্যক্তি কিনা।

১) জবানবন্দি

আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দি অনুযায়ী, ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের মরহুম সানাউল্লা মোল্লার ছেলে আবদুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হোক ইন্সটিটিউশন থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে রাজেন্দ্র কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন কাদের মোল্লা। তিনি শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। জবানবন্দি অনুসারে ১৯৭১ এ পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্সের শেষবর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগীয় চেয়ারম্যান ডঃ ইন্নাস আলীর পরামর্শমতো ১১ই মার্চ তিনি গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদে ফিরে যান এবং ধলা মিয়া পীর সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় পান। পীর সাহেবের আনুকূল্যে তিনি তদস্থ চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। ঐ সময়ে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন এবং সদরপুর পুলিশ স্টেশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদারের সঙ্গে। জবানবন্দি অনুযায়ী স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের শাসনকালেই ১৯৭২ সালের শেষদিকে তিনি ঢাকা ফিরে আসেন, কিন্তু পড়াশোনায় দীর্ঘ বিচ্ছেদের কারণে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় ১৯৭৪ সনে শহীদুল্লাহ হলে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশনে ভর্তি হন এবং ১৯৭৫ এ ঐ বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন সহ ডিপ্লোমা শেষ করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। ১৯৭৭ সালে একই ডিপার্টমেন্ট থেকে এডুকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স শেষ করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা রাইফেলস পাবলিক স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে মামলার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দেশের কোথাও কোন মামলা বা সাধারণ ডায়েরি দাখিল করা হয়নি।

২) সহপাঠীর বক্তব্য

সম্প্রতি কাদের মোল্লার এক সহপাঠী ডঃ মোজাম্মেল খানের লিখিত একটি নিবন্ধ ইন্টারনেটে শেয়ার করা হচ্ছে যার মূল বক্তব্য হোল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের আগেই ইসলামী ছাত্র সংঘের সাথে জড়িত ছিলেন, তা দেখানো। এ বক্তব্যটি অবশ্য কাদের মোল্লার জবানবন্দির সাথে সাংঘর্ষিক নয় যেহেতু তিনি নিজেও তা উল্লেখ করেছেন। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে লেখক বলতে পেরেছেন –

কাদের মোল্লা তার রাজেন্দ্র কলেজের ১৯৬৪-১৯৬৬ এইচএসসি ব্যাচের সহপাঠী ও হাউজমেট ছিলেন।
১৯৬৬ সালে লেখকের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়া এবং কাদের মোল্লার ফরিদপুরেই থেকে যাবার পর অভিযুক্তের সাথে তাঁর ফের দেখা হয় ১৯৭৯ সালে – তাঁদের কথোপকথনে প্রতীয়মান হয় লেখক জয় বাংলা পন্থী এবং কাদের মোল্লা জিন্দাবাদ পন্থী ছিলেন।

বাকি সব আর্গুমেন্ট শোনা কথার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং দুই-দুই এ চার মেলানো।

লেখক কাদের মোল্লার পরিবারকেই কোট করছেন যে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। লেখক ধরে নিয়েছেন ৭২-৭৫ সে আত্মগোপনে ছিল, কারণ দুই বছরের এমএসসি ডিগ্রীর জন্য ৮ বছর লাগতে পারে না। এ যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয় কারণ ১৯৭৫ সালে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ থেকে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন অর্জন করেন যা থেকে প্রতিভাত হয় তিনি অন্তত ১৯৭৪ শিক্ষাবর্ষে ((বা মুক্তিযুদ্ধের পর এবং ১৯৭৫ এর আগে অন্তত দুই বছর)) ঢাবিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
লেখক ধরে নিয়েছেন যে রাজেন্দ্র কলেজে ১৯৬৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসির পর ঢাবিতে তিনি দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি করেছেন যাতে এতো সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু উপরে প্রদত্ত তথ্য অনুসারে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ১৯৬৯ সনে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও, যুদ্ধের পর তিনি বিষয় পরিবর্তন করে ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৭৫ এ ডিপ্লোমা এবং ১৯৭৭ এ মাস্টার্স – দুটি ডিগ্রি সমাপ্ত করেন যা জবানবন্দির সময়ের সাথে মিলে যায়। ধরে নেয়া যেতে পারে বক্তব্যের সমর্থনে প্রাসঙ্গিক সকল সার্টিফিকেট তিনি আদালতে সাব্যস্ত করেছেন – অন্যথায় তাঁর যুক্তি উড়িয়ে দেয়া প্রসিকিউশনের জন্য খুবই সহজ ছিল।
লেখকের উপস্থাপনা কাদের মোল্লার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ইঙ্গিত করলেও এমন কোন তথ্য প্রদান করে না যা ফরিদপুরের কাদের মোল্লাকে ঢাকার মিরপুরে অপরাধ সংঘটনের স্থলে প্রতিষ্ঠিত করে।

৩। ৭৫ এর পূর্বে না পরে?

১৯৭৫ সালে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ থেকে তাঁর পূর্ববর্তী বিষয় (পদার্থবিজ্ঞান) হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়ে (শিক্ষা) ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন অর্জন করেন যা থেকে প্রমাণ হয় তিনি অন্তত ১৯৭৪ শিক্ষাবর্ষে (বা মুক্তিযুদ্ধের পর এবং ১৯৭৫ এর আগে অন্তত দুই বছর) ঢাবিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
অভিযুক্ত কাদের মোল্লা ১৯৭৪-৭৫ সনে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যস্থিত উদয়ন বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন বলে দাবী করেছেন। এর বিপরীতে উদয়ন বিদ্যালয় কোন অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট দিয়েছেন বলে জানা যায় নি যা তাঁর দাবীকে অসত্য প্রমাণ করতে পারত।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে কাদের মোল্লা ৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর নয়, বরং তার আগেই ঢাকায় পুনর্বাসিত হন এবং শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিচরণ করেন।
এখানে দ্রষ্টব্য যে দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ ১৯৭২ এর অধীনে ৩৭০০০+ লোককে আটক করা হয়। সত্যাসত্য, ব্যক্তিগত শত্রুতা চরিতার্থ সহ মামলা/অভিযোগ ছিল আরও অনেক বেশি। সেখানে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে কুখ্যাত এ লোকটি স্বাধীনতার পর কোনও মামলা ছাড়াই সবার নাকের ডগার উপর দিয়ে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি করল? এ নিয়ে কোন মামলা ছাড়াই লোকসমক্ষে ঘুরে বেড়াল ৪০ বছর? এ ব্যাপারটি এতই অবিশ্বাস্য যে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এই ভিডিওটিতে - কাদের মোল্লা কসাই কাদের হলে যুদ্ধের পর কিভাবে ঢাবিতে পড়ে?
দ্রষ্টব্য, ১৯৭২ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর আদালত জনৈক আকতার ওরফে বিহারী আক্তার গুন্ডাকে [ যেই আকতারের নাম কাদের মোল্লার মামলায় বার বার এসেছে, নিচে শহীদুল হক মামার সাক্ষ্য দ্রষ্টব্য] সেতাব মাতবর, শেফাতুল্লাহ মাতবর এবং আহমেদ মিয়াকে ৮ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে নৃশংস ভাবে হত্যা করবার অভিযোগে ফাঁসী প্রদান করে। মামলার প্রথম রায় হয় ট্রাইবুনালে ৩০-১২-৭২ পরে আপীল করলেও সেই রায় বহাল থাকে। সেই রায়ের তারিখঃ জুলাই ২৪, ১৯৭৩। প্রশ্ন জাগে, যে আক্তার গুন্ডাকে কাদের মোল্লার একান্ত সহযোগী বলা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের পর তার নামে মামলা হয়েছে, আদালতের রায়ে তার ফাঁসিও হয়েছে। অথচ, ফরিদপুরের আব্দুল কাদের মোল্লার নামে ৪০ বছরে কোন মামলা করা হয়নি যদিও সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই ঘুরে বেড়িয়েছে বছরের পর বছর। কেন? কারণ কি এই যে ফরিদপুরের আব্দুল কাদের মোল্লা আদতেই 'মিরপুরের কসাই' ছিলেন না?

কাদের মোল্লা পাকিস্তানপন্থী হয়তো সে ছিল, তবে প্রশ্ন জাগে এই কাদের মোল্লাই কুখ্যাত কসাই কাদের কিনা যার অপরাধের দায়ভার নিয়ে এ লোকটিকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।

৪। মামার বক্তব্য

প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন শহীদুল হক মামা। ষাটের দশকে মিরপুরের বাসিন্দা হিসেবে তিনি ঘটনা চলাকালীন সময়ে মিরপুরে কাদের মোল্লার উপস্থিতি প্রমাণে একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে তার প্রদত্ত বক্তব্য ও সাক্ষ্যে কিছু অসঙ্গতি দেখা যায় -

আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্যে তিনি কালানুক্রমিক ঘটনা বর্ণনা করার সময় প্রথম মিরপুরে কাদের মোল্লার নাম ও উপস্থিতি উল্লেখ করেন ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন চলার সময়কালে –

Prosecutor: State about the movement of 1966.
Witness: There was a movement in 1966 for the demand of 6 items. I participated in that movement. That movement was Bangalies’ demand for life.
Defense Counsel (Ekramul Haque): It seems that, the prosecutor friend is deriving information by licking the witness.
Prosecutor: What was the background of this movement?

Witness: At first the movement demanded 6 items, then the students’ movement demanded 11 items – the main sight behind both these movements were the confinement of the hero of history under the conspiracy case of Agartala.
Defense Counsel (Ekramul Haque): My Lord, I am sorry. My learned friend is thinking that I understand nothing. His way of questioning is not correct.

Prosecution Witness (Sayed Shahidul Haque Mama) told angrily, you have come as the agent of Rajakars of 1971, but I have come here in response of my conscience.

Prosecutor (Mohammad Ali) cooled down and told to say his statement.
Witness: By keeping 6 items’ and 11 items’ in front, we participated in movements. We went in front of Beauty Cinema Hall of Mirpur with procession. Then the leader of Muslim League S.A Khaleque and the sun of Monem Khan Md. Khoshru attacked and fired at the procession with their team.

Prosecutor: Then, what happened?

Witness: Then Quader Mollah of Jamaat-e-Islami, Dr. T. Ali, Hakka Gunda, Akhter Gunda, Nehal, Hasib Hashmi, Abbas Chairmen, Kana Hafez along with their followers invited Muslim League leader Khan Abdul Kaiyum who was known as Tiger of Border to defend 6 items’ and 11 items’ movement.

পরবর্তীতে, তিনি এই একই নামসমূহ মিরপুর এলাকার অন্যান্য পাকিস্থানপন্থি বিভিন্ন ঘটনার সাথে উল্লেখ করতে থাকেন। এ থেকে অনুমান করা যায় যে জনৈক কাদের মোল্লা অন্তত ১৯৬৬ সাল বা তারও আগ থেকে মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। অন্যদিকে, অভিযুক্তের দাবি অনুসারে (এবং ধরে নেয়া যায় বক্তব্যের সমর্থনে অফিসিয়াল সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হয়েছে) ১৯৬৬ সালে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শুধু তাই নয়, কাদের মোল্লার বিরোধী শিবির কর্তৃক বহুল প্রচারিত উপরোক্ত কাদের মোল্লার সহপাঠী মোজাম্মেল খানের ভাষ্য এই বিবরণটিকেই সমর্থন দেয় যেখানে তিনি দাবী করেছেন ১৯৬৪-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এইচএসসি পড়াকালীন সময়ে কাদের মোল্লার হাউজমেট ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রকৌশল পড়ার জন্য ঢাকায় চলে আসেন, কিন্তু কাদের মোল্লা ঐ একই কলেজে বিএসসি পড়তে রয়ে যান।

এ থেকে প্রশ্ন জাগে, কোন কাদের মোল্লা তবে মামার ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৬৬ সালে মিরপুরে বিহারীদের সাথে পাকিস্থানপন্থি কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল? কিভাবে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র পড়া চলাকালীন সময়ে নিয়মিত ঢাকার মিরপুরে বিভিন্ন ঘটনায় অংশ নেয়?

১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে মিরপুরে বাঙ্গালি ও অবাঙ্গালি বিহারীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষ ও নির্মম ঘটনাবলী নিয়ে তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি হচ্ছে Mirpur, The Last Frontier

Mirpur, The Last Frontier, Part 1
Mirpur, The Last Frontier, Part 2

মিরপুরের বিভিন্ন ঘটনাবলীর চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে শহীদুল হক মামা এবং কবি কাজি রোজি এই প্রামাণ্যচিত্রে বক্তব্য দেন। সমস্যা হোল, বিশেষভাবে মিরপুরের ঘটনাবলীর উপর নির্মিত দুই পর্বের এ প্রামাণ্যচিত্রের কোথাও শহীদুল হক মামা এবং কাজি রোজি কাদের মোল্লার নামই উল্লেখ করেননি, বরং কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বিশেষভাবে কেবল বিহারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার উপর বিশেষভাবে লিখিত একটি বইতেও কবি কাজি রোজি কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি। এ অসঙ্গতি আদালতের গোচরীভূত করা সত্ত্বেও আদালত তা আমলে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। মিরপুরের শুধু একটি ঘটনায় ৩৪৪ জনের গণহত্যার মতো অভিযোগ যে লোকটির বিরুদ্ধে, তার নাম মিরপুরের ঘটনাবলীর উপর নির্মিত এতো বিশদ প্রামাণ্যচিত্রের কোথাও উল্লিখিত না হওয়া বিচিত্র নয় কি? আরও অদ্ভুত বিষয় হল, প্রামাণ্যচিত্রটিতে শহীদুল হক মামা বিশেষভাবে মিরপুরের কসাইখানার কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে বিহারী কসাইরা বাঙ্গালীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে। এ থেকে প্রশ্ন জাগে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে কুখ্যাত ব্যক্তিটি কি আক্ষরিক অর্থেই একজন ‘কসাই’ ছিল, যে সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে?

৫। কসাই কাদের?

উপরোল্লিখিত ঘটনার বিবরণ এবং সময়লিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদের মোল্লার নয়, বরং সেই সময়ে মিরপুরের বাসিন্দা জনৈক কসাই কাদেরের উপস্থিতি সম্পর্কিত থিওরিকেই বরং সমর্থন করে বেশি। কসাই কাদের বলে আসলেই কি কেউ ছিল? এ সম্পর্কে নেট সার্চ করে যা পাওয়া যায়, তা হোল -

জনৈক মোঃ নূরুল আমিন এর লেখা নিবন্ধ যাতে তিনি উল্লেখ করেছেন

…আমি ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রথমত ছাত্র হিসেবে পরে শিক্ষক সাংবাদিক হিসেবে ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত ছিলাম। কিন্তু কাদের মোল্লা নামের কোনও ব্যক্তিকে আমি জামায়াত বা ছাত্রসংঘের হয়ে কাজ করতে দেখিনি। মিরপুরে কসাই কাদের নামে একজন কাদের মোল্লা ছিলেন তার নাম আমরা শুনেছি। তিনি পেশায় কসাই ছিলেন এবং মানুষ হত্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। তার একভাই বহুদিন পর্যন্ত কাওরান বাজারে গোশত বিক্রি করতো। তার কাছে শুনেছি কসাই কাদের তথা মিরপুরের কাদের মোল্লাকে স্বাধীনতার পর হত্যা করা হয়েছে। আগেই বলেছি জামায়াতের কাদের মোল্লাকে ৭১ সালে আমি কখনো দেখিনি। তার বাড়ি ফরিদপুর; তিনি কখনো মিরপুরের বাসিন্দা ছিলেন না। … যেহেতু জামায়াতের কাদের মোল্লা কখনো মিরপুরে ছিলেন না, কোনও অপরাধ করেননি সেহেতু স্বাধীনতার পর থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনও জিডি হয়নি, দালাল আইনে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি।

Somewhereinblog এ ভ্রমনবিলাসী বালকের লেখা

এটিএন বাংলা কসাই কাদের মোল্লার অপরাধ খুঁজতে গিয়ে আমাদের ঢাকা মিরপুর আসনের আসলামুল হকের পিতার নাম এসেছিল।কিন্তু মুফতে তার নাম গাপ করে ফেলা হয়েছে । এখন কেরানীগঞ্জে গেলে কিছু জানতে পারবেন কিনা জানি না । কিন্তু এটিএন বাংলায় এর তথ্য প্রমাণ সংবলিত ভিডিও গাপ না করে দিলে পেতে পারেন

শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের কি এক? ছবি কি বলে? তথ্যসূত্র এখানে

উপরের ছবিটি ট্রাইব্যুনালে সংরক্ষিত সরকার পক্ষের কৌসুলিদের জমা দেয়া কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মহা গুরুত্বপূর্ন একটি ডকুমেন্ট। ছবিতে জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর পিছনে দাঁড়ানো মিরপুরের বিহারী 'কসাই কাদেরকে' আব্দুল কাদের মোল্লা বলে চালানো হয়েছে। নিচের ছবিতে ৯২ সালের রোকন সম্মেলনে তৎকালীন আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের পাশে দাঁড়ানো আব্দুল কাদের মোল্লা।
বিশ্লেষণঃ ১৯৭১ সালে-

নিয়াজীঃ উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী নিয়াজীর বয়স ছিল ৫৭ বছর। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি।
কাদের মোল্লাঃ বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী কাদের মোল্লার বয়স ছিল ২২/২৩ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।
কসাই কাদেরঃ অসমর্থিত সূত্র এবং বিশ্লেষণ অনুযায়ী কসাই কাদেরের বয়স ছিল ৪৮ বছর। পাশে দাঁড়ানো নিয়াজীর সাথে তুলনা করলে বিহারী কসাই কাদেরের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।

প্রশ্ন-১: ৯২ সালে নিচের ছবিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের পাশে দাঁড়ানো ৪৩/৪৪ বছর বয়স্ক কাদের মোল্লাকে যদি ২১ বছর আগে কল্পনা করা হয় তাহলে কি নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো ৪৮ বছর বয়স্ক 'কসাই কাদেরের' মতো মনে হবে?
প্রশ্ন-২: হিসাব অনুযায়ী নিয়াজীর চেয়ে প্রায় পৌনে ১ ফুট কম উচ্চতার কাদের মোল্লাকে নিয়াজীর পাশে দাড় করালে তাকে কি (কসাই কাদেরের মতো) প্রায় নিয়াজী বরাবর মনে হওয়ার কথা?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি বীরউত্তম, শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তার এক কলামে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে স্যাটায়ার করে লিখেন-

"পিতা, কাদের মোল্লাকে নিয়ে দেশ এখন উত্তাল, পুরা দেশে এক নাম- কাদের মোল্লা! তার ফাঁসির দাবী চলছে। কিন্তু পিতা তুমি হয়তো এই কাদের মোল্লাকে চিনোনা, কারণ আমাদের সময়ে যাদের যাদের বিচারের লিষ্ট আমরা বানিয়েছিলাম তাতে এই কাদের মোল্লা ছিলোনা। তুমি কীভাবে চিনবে, আমরাই তো কেউ চিনতাম না।"

৬) সাক্ষী মোমেনা

যে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়, তাঁর তিনটি ভিন্ন সময়ে একই ঘটনার তিনটি ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায় যা পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২০০৭ এবং ২০১০ সালে দেয়া দুটি ভিন্ন বক্তব্যে তিনি অপরাধের জন্য কেবল বিহারী এবং পাক সেনাদের দায়ী করেছেন এবং কাদের মোল্লা বা অন্য কোন বাঙ্গালী এর সাথে জড়িত থাকার কথা বলেননি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রথম বক্তব্যে তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন না বরং শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে উল্লেখ করেন। কেবলমাত্র তৃতীয় দফায় ক্যামেরা ট্রায়ালে মুখ ঢাকা অবস্থায় যে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য নেয়া হয়, তাতে তিনি কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেন ও নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবী করেন। এ অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্যদাতার সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ফাঁসির রায় দেয়া নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তাঁর পূর্ববর্তী বিবরণ 'সাক্ষ্য' ছিল, না 'জবানবন্দি' ছিল, না 'বক্তব্য' ছিল, তা নিয়ে আইনের ত্যানা পেঁচিয়ে পাতার পর পাতা ভর্তি করে ফেলা এবং তার ভিত্তিতে আদালতে তাঁর পূর্ববর্তী সাংঘর্ষিক বক্তব্য তুলে ধরার পরেও আদালত কর্তৃক তা আমলেই না নেয়ার সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ জাস্টিফাই করার চেষ্টা করতেই পারেন, তবে জনসাধারন্যে স্বাভাবিকভাবে এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় -

২০০৭ সালে সংগৃহীত এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত মোমেনা বেগমের বিবৃতি যাতে কেবল বিহারীদের কথা উল্লেখ আছে
Unreliability of witness testimony is reason alone why Molla should not be hanged
Sole witness in Molla death penalty case gave contradictory accounts
এক মোমেনা বেগমের তিনটি সাক্ষ্য

৭) ভি চিহ্ন

অভিযুক্ত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় পাবার পর ভি চিহ্ন দেখানোকে কেউ কেউ অন্যায়ের প্রতি তাঁর সমর্থনসূচক ভঙ্গি হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। এ ব্যাখ্যা যে ভুল, অভিযুক্তের স্ত্রীকে লেখা শেষ চিঠিই তার প্রমাণ যেখানে তিনি অভিযোগসমূহের দায়ভার সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং তার প্রতি আদালতের রায়কে প্রতিশোধমূলক ও অন্যায় বলে উপস্থাপন করে তাঁর পরিণতিকে মিসরীয় ধর্মীয় নেতা সাইয়্যেদ কুতুবের জালিমের হাতে শহীদি মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন - সত্য এই যে, কেবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় পাবার পর নয়, বরং ফাঁসির রায় পাবার পর, এমনকি ফাঁসির আগে তাঁর স্ত্রী তাঁর সাথে শেষ দেখা করে ফেরার পথেও ভি চিহ্ন দেখিয়েছেন। কাদের মোল্লা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে উত্থাপিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং যে অপরাধ তিনি করেননি তার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতেও অস্বীকার করেছেন। ভয় ও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করাকে তিনি তাঁর নৈতিক বিজয় হিসেবেই দেখেছেন বলে প্রতিভাত হয়।

৮) পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

১৯৭১ এ পাকিস্তানকে সমর্থন করার কারণেই জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, এ মর্মে পাকিস্তানের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বক্তব্যকে অনেকে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে নিয়েছেন। এ যুক্তি হাস্যকর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির বিষয়টি ঠিক এভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে, তাই এ বক্তব্য তার প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর কাদের মোল্লাই যে মিরপুরের কসাই কাদের, তা প্রমাণ করতে প্রসিকিউশনের বাঘা বাঘা উকিলদের ঘাম ছুটে গেল, আর কোথাকার কোন ইমরান খান, যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না, যিনি কাদের মোল্লাকে কখনও দেখেছেন বলেও জানা যায় না, তাঁর এক কথাতেই প্রমাণ হয়ে গেল কাদের মোল্লাই ছিলেন মিরপুরের কসাই?

৯) হাতের লেখার ভিন্নতা

সম্প্রতি সাবেক এমপি রনিকে লেখা কাদের মোল্লার চিরকুট এবং স্ত্রীকে লেখা শেষ চিঠির হাতের লেখায় ভিন্নতা তুলে ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিষয়টি যদিও আদালতে ধর্তব্য ছিল না, তবে একটি বিষয় না বললেই নয়, এমপি রনির নিজস্ব সংবাদপত্রে প্রথম প্রকাশিত খবরে এ জাতীয় কোন চিরকুটের ছবি দেয়া হয়নি এবং এখনও নেই। বরং সংবাদটি প্রকাশিত হবার পর বহু রকম চিরকুটের ছবিই ইন্টারনেটে তুলে দেয়া হয় যার একটি নিচে দেয়া হোল। নিজ নামে কোন চিরকুটের ছবি প্রকাশ না করা ছাড়া এর পক্ষে-বিপক্ষে রনির কোন বক্তব্য চোখে পড়েনি।

১০। পরিশেষ

সাম্প্রতিককালে ফাঁসিপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাই ‘মিরপুরের কসাই কাদের’ কিনা, এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কাদের মোল্লার বিরোধী পক্ষ সচরাচর বলে থাকেন, কাদের মোল্লা যদি ‘মিরপুরের কসাই কাদের’ না হবেন, তবে তাঁর কৌঁসুলিদেরই প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল আসল কাদের মোল্লা কে ছিল, কোথায় গেল, ইত্যাদি। উপরে উল্লিখিত তত্ত্বসমূহ বাদ দিলেও এ যুক্তির অসারত্ব প্রমাণে বলা চলে – burden of proof lies with the accuser, not the defendant. ফরিদপুরের কাদের মোল্লা তাঁর ফরিদপুর কেন্দ্রিক জীবন বৃত্তান্ত এবং ঘটনা চলাকালীন সময়ে ফরিদপুরের সদরপুরে তাঁর উপস্থিতি প্রমাণে একাধিক অন্যত্রস্থিতি (alibi) সাক্ষী উপস্থিত করেছেন প্রসিকিউশন যাদের বক্তব্য মিথ্যা প্রতীয়মান করতে পারেননি। অভিযুক্তের পক্ষ থেকে এটুকু করাই যথেষ্ট। সত্য এই যে, অভিযুক্তকে কেবল পাঁচজন alibi সাক্ষীরই অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর বাইরেও অভিযুক্ত একাধিক বরেণ্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন যাদের উপস্থিত করেও প্রসিকিউশন অভিযুক্তের alibi এবং ভাষ্য মিথ্যা প্রমাণ করতে পারতেন। এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, যার জন্মস্থান আলোচিত ফরিদপুরের সদরপুরে, তিনি “কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের” শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন

কাদের মোল্লা উল্লেখ করেছেন, তিনি সদরপুরে আরও ৩০-৩৫ জনের একদল যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন! কি ভয়াবহ বক্তব্য। প্রসিকিউশনের উচিত ছিল যথাযথ যুক্তিপ্রমাণ উত্থাপন করে এ বক্তব্যটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা। কাদের মোল্লা বলেছেন, যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় তিনি পীর সাহেবের বাড়িতে ছিলেন। তার টাকা দিয়ে তিনি চৌদ্দরশি বা সাড়ে সাতরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। চৌদ্দরশি বাজার ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার। স্বাধীনতার সময়ও এই বাজার বসত প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার। কম করে হলেও ৫০ হাজার লোকের আগমন ঘটত হাটের দিনে। পীর সাহেবের দোকানটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং বাজারের একমাত্র দ্বিতল টিনের ঘর। পীর সাহেবের মেজ ছেলে রহিচ ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতেন। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের গুলিতে মারা যান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা যদি ওই বাজারে ব্যবসা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত এক লাখ লোককে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যাবে। আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এককালীন চিফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কাজী জাওয়াদ বিচিত্রা ছেড়ে লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি করতেন এবং এখন তিনি বিলাত প্রবাসী। তাকেও সাক্ষী হিসেবে আনা যেত। কাদের মোল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তিনি রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যাপনা এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাইশরশি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উঁচুপদে এমনকি সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন আরও অনেক নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারতেন। তিনি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য_ দু-দুইবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। কাজেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একাধিক জাতীয় ও বরেণ্য সাংবাদিককে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা যেত।

alibi সাক্ষীদের বক্তব্যের বিপরীতে ফরিদপুরের কাদের মোল্লাই যে ৭১ এর কুখ্যাত “মিরপুরের কসাই” – এ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল প্রসিকিঊশনের, ফরিদপুরের কাদের মোল্লার নয়। উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও তথ্য সম্পর্কিত অসঙ্গতিই প্রমাণ করে কাদের মোল্লার আইডেন্টিটি এবং অপরাধ সংঘটন স্থলে তাঁর উপস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে প্রসিকিঊশন ব্যর্থ হয়েছেন। কাদের মোল্লা ও মিরপুরের কসাই কাদেরের পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যার কিয়দংশ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃত সত্য কোনটি তা আল্লাহই ভাল জানেন। আমাদের জন্যে তাঁর পথ-নির্দেশনা কেবল এটুকুই -

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর, এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।” - আল মায়িদাহ, ৫:৮

“O ye who believe! Stand out firmly for Allah, as witnesses to fair dealing, and let not the hatred of others make you swerve to wrong and depart from justice. Be just: that is next to piety: and fear Allah. For Allah is well-acquainted with all that ye do.” - Al Mayidah, 5:8

১১)এক নজরে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

Human Rights Watch: Bangladesh: Death Sentence Violates Fair Trial Standards ... Changing the law and applying it retroactively after a trial offends basic notions of a fair trial under international law.
Amnesty International: Bangladesh: Death sentence without right of judicial appeal defies human rights law
International Commission of Jurists: Bangladesh: Abdul Quader Mollah death sentence violates international law
Christof Heyns, Special Rapporteur (UN) on summary executions, said capital punishment "may be imposed only following a trial that complied with fair trial and due process safeguards. Only full respect for stringent due process guarantees distinguishes capital punishment as possibly permitted under international law from a summary execution, which by definition violates human rights standards."
US Ambassador-at-Large Stephen Rapp, Office of Global Criminal Justice, said during a press interview earlier this year: countries that impose a death penalty must do so with great care, in accordance with a very high standard of due process and respect for fair trial guarantees.
Sir Geoffrey Nice QC, former prosecutor of Slobodan Milosevic: ‘This trial has not adhered to even the most basic international standards. It is concerning that this execution is taking place after such a deeply flawed judicial process. That the justified concerns of international legal experts are being so willfully ignored suggests these trials have lost all legitimacy.’
The UN High Commissioner for Human Rights Navi Pillay condemned the Tribunal saying it does not meet the standards expected for the delivery of fair justice.
More reactions

তথ্যসূত্র

http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/
http://blog.priyo.com/golam-maula-rony/41154.html
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/12/18/228822#.UrEe-mp8Opo
http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/2013/02/15-nov-2012-mollah-1st-defense-witness.html
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-09-22&ni=149559
http://bn.wikipedia.org/wiki/দালাল_আইন_(বিশেষ_ট্রাইব্যুনাল)_আদেশ_১৯৭২
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=38384
http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/2012/07/10-jul-molla-1st-witness-testimony.html
http://www.youtube.com/watch?v=0g-JWMQD1BU
http://www.youtube.com/watch?v=VcoXGiKNU7o
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=127976
http://www.somewhereinblog.net/blog/qamark67/29767717
http://chairmanbd.blogspot.com/2013/12/blog-post_6406.html
http://webcache.googleusercontent.com/search?q=cache%3AMij688HzN-gJ%3Awww.somewhereinblog.net%2Fblog%2Fhiravisa%2F29769330+&cd=2&hl=en&ct=clnk&gl=us
http://bn.wikipedia.org/wiki/দালাল_আইন_(বিশেষ_ট্রাইব্যুনাল)_আদেশ_১৯৭২
https://www.hrw.org/news/2013/09/18/bangladesh-death-sentence-violates-fair-trial-standards
https://www.amnesty.org/en/for-media/press-releases/bangladesh-death-sentence-without-right-judicial-appeal-defies-human-rights
http://www.icj.org/bangladesh-abdul-quader-mollah-death-sentence-violates-international-law/
http://www.un.org/apps/news/story.asp?NewsID=46688&Cr=death+penalty&Cr1#.UrkFDOK-6pp
http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/2013/12/mollas-impending-execution.html

post source :https://www.facebook.com/notes/অগ্নি-বীণা/কাদের-মোল্লা-কসাই-কাদের-ও-কিছু-প্রশ্ন/183793608495189

http://chairmanbd.blogspot.co.uk/2013/12/blog-post_3589.html

মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩

Abdul Qader Mollah a prominent politician and social activist who is accused of war crime in 1971 on the based on fake witness. A fake witness (Momena) was appeared into the International War Crime Tribunal to bear witness against Abdul Qader Mollah. Several Online activist have proved the difference between fake witness Momena’s photo and real Momena’s photo which is exhibited in Liberation War Museum by their post through social media.